স্টাফ রিপোর্টারঃ
গাজীপুর বিআরটিএ অফিসে ঘুষ ছাড়া কোন সেবা মেলে না। দালালদের দৌরাত্ম্যে সেবাপ্রার্থীরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। অবাধে চলছে ঘুষ বাণিজ্য। সেবাপ্রার্থীদের ভোগান্তি প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।বর্তমানে ঘুষ বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছেন মোটরযান পরিদর্শক সাইদুল ইসলাম সুমন।
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের উত্তর পাশে দ্বিতীয় তলায় বিআরটিএ অবস্থিত। প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন রুম ও সামনের খোলা ছাদে দালালদের ভিড়। কেউ ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ির রেজিস্ট্রেশন করতে গেলে তাদের শরণাপন্ন হতে হয়। চুক্তি ছাড়া কোন কাজ হয় না।
এর কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, বেশির ভাগ সেবাপ্রার্থী নিয়ম-কানুন জানেন না। অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের সাথে ব্যস্ততা দেখান। তাই আবেদন করার শুরুতেই দালাল শরণাপন্ন হতে হয়। সেই সুযোগে তারা সেবা প্রার্থীদের হয়রানি করে হাতিয়ে নিচ্ছেন অতিরিক্ত টাকা।
গাজীপুর বিআরটিএ অফিসের সেবা দীর্ঘদিন ধরে দালালমুখী। এখানে দালালি করে কেউ কেউ বাড়ি-গাড়ির মালিক বনে গেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দালাল হলো, মমিন, রাসেল, কাজল, লিমন, কমল, সুমন, শান্ত, রুহুল। এসব দালাল ছাড়া আরও অনেকে আছে যারা সরাসরি অফিসের সাথে যোগাযোগ করে দালালি করে থাকে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) গাজীপুর সার্কেলে ঘুষ বাণিজ্যের কয়েকটি খাত রয়েছে। এর মধ্যে পরীক্ষার বোর্ড বাবদ বাণিজ্য বেশ আলোচিত। লেনদেনের জন্য লালন করা হয় দালাল। বেশির ভাগ সেবাপ্রার্থী অফিসিয়াল নিয়ম-কানুন জানেন না। তারা হয়রানি এড়াতে দালালদের দ্বারস্থ হন। কর্মকর্তারা বোর্ডে পাস কার্ড বাবদ দালালদের মাধ্যমে প্রার্থীপ্রতি দুই হাজার টাকা করে নেন এবং লাইসেন্স নবায়নের জন্য প্রার্থীপ্রতি এক হাজার পাঁচশো করে টাকা নেন। তবে কিছু প্রার্থী নিজ দক্ষতায় বিনা টাকায় উত্তীর্ণ হন।
দালালরা বোর্ডের টাকা অফিসের নির্ধারিত কর্মচারী শাহ আলমের কাছে দেন। পরে তা মোটরযান পরিদর্শক সাইদুল ইসলাম সুমনের কাছে জমা হয়। সেখান থেকে পদ অনুযায়ী ভাগ-বাটোয়ারা হয়।
এছাড়াও গাজীপুর বিআরটিএ অফিসে রেজিষ্ট্রেশন, ফিটনেস, মালিকানা পরিবর্তন এবং রুট পারমিট সকল ক্ষেত্রেই ঘুষ বাণিজ্য চলছে ওপেন সিক্রেট।
বেশ কয়েকজন সেবাপ্রার্থী জানান, তারা দালালদের মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন ও ব্যাংকে ফি জমা দিয়েছেন। দালালরা সাধারণত বোর্ডের টাকাসহ ১০-১২ হাজার টাকা করে নেন। দালাল ছাড়া লাইসেন্স হয়-এই সংখ্যা খুব কম। দালালরা কাজ নেওয়ার সময় বলে দেন, লিখতে না পারলে ও গাড়ি না চালাতে পারলেও কোন সমস্যা নাই। আমরা ইন্সপেক্টরকে টাকা দিয়ে দেই তারাই সব ম্যানেজ করেন। অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, কারও শিক্ষাগত সার্টিফিকেট না থাকলেও জাল সার্টিফিকেট দালালরা তৈরি করে থাকেন এবং মেডিকেল সার্টিফিকেটও জাল করে থাকেন। আবেদন অনুমোদনের সময় এসব কাগজপত্র চেক করার কথা থাকলেও ইন্সপেক্টর এগুলো তদন্ত করেন না।
বিআরটিএ সূত্র জানায়, গাজীপুর বিআরটিএতে বর্তমানে সপ্তাহে একদিন পরপর পরীক্ষার বোর্ড বসে। মাসে ১১০০-১৩০০ প্রার্থী উত্তীর্ণ হন। অধিকাংশ হিসাবে ৯০০-১০০০ প্রার্থীর কাছ থেকে দুই হাজার টাকা করে নেওয়া হয়। এছাড়াও নবায়ন পরীক্ষায় মাসে দশ লাখ টাকার মতো ঘুষ আদায় হয়। এতে মাসে আদায়কৃত ঘুষের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৫-৩০ লাখ টাকা। অফিসে এতসব অনিয়ম হলেও সহকারী পরিচালক হারুন অর পালন করছেন নীরব ভূমিকা। অভিযোগ রয়েছে ঘুষ দুর্নীতির টাকার বড় একটি অংশ চলে যায় এডির পকেটে।
তবে অভিযোগের বিষয়ে মোটরযান পরিদর্শক সাইদুল ইসলাম সুমন মুঠোফোনে বলেন, আপনি আমার অফিসে আসেন।
গাজীপুর বিআরটিএর সহকারী পরিচালক হারুন অর রশিদকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি।
গাজীপুর জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফিন বলেন, খুব দ্রুত দুর্নীতির সাথে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং দালালদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।