চট্টগ্রাম ব্যুরোঃ
চট্টগ্রামে নানা নামে ‘বৈষম্যবিরোধী’ ব্যানার ও শব্দকে ব্যবহার করে নানা কৌশলে অপরাধ কর্ম করছে সুযোগসন্ধানী চক্র। নগরী ও বিভিন্ন উপজেলায় তারা দখল-বেদখল, লুটপাট ও চাঁদাবাজি করছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের নাজেহাল, ভয়ভীতি প্রদর্শন, গভর্নিং কমিটি গঠন কিংবা ভাঙার জন্যও তারা নানাভাবে চাপ দিচ্ছে ও প্রভাব খাটাচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন শিল্প অধ্যুষিত এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ব্যানারের নামে কথিত চক্রটি ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার অপচেষ্টা ও পায়তারা করছে। এদিকে বিগত ১৫ বছর আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে আনোয়ারা কেইপিজেডে জুড ব্যবসা চালান ইউনুস গণি নামক এক পল্টিবাজ। সে এখন দক্ষিণ জেলা বিএনপির নেতা এনামুল হক এনাম ও চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্র দলের সাবেক সভাপতি গাজী সিরাজ উল্লাহর সাথে আতাত করে বিএনপি সেজে পল্টিবাজ ইউনুস গণি জুট ব্যবসা বাগিয়ে নিয়ে ব্যবসা ধরে রাখতে অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে একাধিক সূত্র জানায়। আওয়ামী লীগ সরকার পরিবর্তনের পর এস আলমের গাড়ি সরানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত হওয়ায় দক্ষিণ জেলা বিএনপির নেতারা ও এনাম – গাজী সিরাজ প্রকাশ্যে আসতে পারছে না। অপর একটি সূত্র জানায়, বিএনপি নেতা এনাম ও সাবেক ছাত্র দলের নেতা গাজী সিরাজ কর্ণফুলীর বালুর মহাল দখল নিয়ে প্রভাব খাটাচ্ছে।
সম্প্রতি লোহাগাড়া উপজেলায় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন মোজাম্মেল হক নামে একজন মাদ্রাসার শিক্ষক। এদিকে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী মিডিয়া টাওয়ারে কর্মরত জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকে কর্মরত ২২টি গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা সিএমপি কমিশনার বরাবরেও কথিত এই চক্রের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।
জানা যায়, ব্যানার সর্বস্ব এসব সংগঠন সরকার পতনের পরই গজিয়ে উঠেছে। এর আগে তাদের কোনো অস্তিত্ব ও নামও ছিল না। চট্টগ্রাম নগরীতে কথিত সাংবাদিক পরিচয়ে ও বৈষম্যবিরোধী ব্যানারকে ব্যবহার করে তিনটি সংগঠনের নামে নৈরাজ্য চালানো হচ্ছে।
জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দেওয়া অভিযোগে ভুক্তভোগী শিক্ষক মোজাম্মেল হক বলেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাম ভাঙিয়ে একটি চক্র লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি এলাকায় ত্রাসের রাজস্ব কায়েম করছে। তারা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি ও নিরীহ মানুষকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। অথচ যখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সারা দেশ উত্তাল তখন তাদের অস্তিত্বই ছিল না। অভিযোগে চক্রের কয়েকজনের নামও উলেখ করেন এই ভুক্তভোগী। এদের মধ্যে রয়েছেন -আসরার মো. হামিদ প্রকাশ ওয়াকিল, আবু বকর সামিত, আবু হুরায়রা, তারেক মো. জুবাইর, সালেহ আহমদ ও মো : রাহিক। এরা লোকজনের কাছ থেকে চাঁদা দাবি, ভয়ভীতি প্রদর্শন, সম্মানিত ব্যক্তিদের চরিত্র হনন, বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জবরদখলের অপচেষ্টা করছে।
চট্টগ্রাম নগরের ঐতিহ্যবাহী হাজেরা-তজু ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ এসএম আইয়ুবকে ভয়ভীতি দেখিয়ে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয় বলেও অভিযোগ ওঠেছে এ চক্রটির বিরুদ্ধে। বিভিন্ন সূত্র জানায়, এ চক্রটি সুযোগ সন্ধানী কিছু শিক্ষককে হাতে নিয়ে এনায়েতবাজার মহিলা কলেজ, ওমরগণি এমইএস বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, সিটি কলেজ, কমার্স কলেজ, মহিলা কলেজ সহ বেশ কয়কটি কলেজ দখল বেদখল ও পদায়নের বিষয়ে দাপট দেখানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।
এছাড়াও হাজেরা তজু কলেজে তিন শিক্ষকের বরখাস্ত আদেশে জোর করে অধ্যক্ষের স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানার ব্যবহার করা হয়েছে। এ নিয়ে সন্দহ ও নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে জামায়াত নেতা অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালীর বিরুদ্ধে।
এদিকে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্য ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে গত ৫ আগস্টের পর থেকে নানা অপপ্রচার চালায় সাংবাদিক নামধারী কিছু দুর্বৃত্ত ও অপেশাদার সাংবাদিক। তারা বৈষম্যবিরোধী সাংবাদিক ঐক্য, বৈষম্যবিরোধী পেশাদার সাংবাদিক ঐক্য ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা সাংবাদিক ঐক্য- এ ধরনের ব্যানারে নৈরাজ্য চালিয়ে আসছে এবং চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে তালাবদ্ধ ও অবরুদ্ধ করে রেখেছে। মূলত এসব ব্যানারের পেছনে রয়েছে খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি ও মাদক মামলার আসামি, চাঁদাবাজির সময় আটক হওয়া অপরাধী, টেম্পো – বাসের হেলপার, জামায়াত, শিবির, বিএনপি ও আওয়ামী লীগের ব্যানারে রাজনৈতিক প্রভাব কাটানো বিভিন্ন সময়ে সক্রিয় থেকে নানা অপরাধে জড়িত লোকজন। তারা কখনো প্রবীণ সাংবাদিক বীর মুক্তিযোদ্ধা মঈনুদ্দিন কাদেরী শওককত কে সামনে আনেন আবার কখনো আয়ান শর্মা বা হাসান ফেরদৌসকে সামনে আনেন। তাদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব ভাঙচুরেরও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এসব সংগঠন গুলোকে পেছনে থেকে কলকাঠি নাড়ছে সাবেক মন্ত্রী মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীনের এপিএস মোহাম্মদ আমিন।
চট্টগ্রামের শিল্প অধ্যুষিত এলাকা হিসাবে খ্যাত বায়েজিদ বোস্তামী, নাসিরাবাদ, সাগরিকা, আকবর শাহ ও পাহাড়তলী এলাকায় চলছে বেপরোয়া চাঁদাবাজি। আগে আওয়ামী লীগের লেবাস ধরে এ নেতাকর্মীরা এসব অপকর্মে জড়িত থাকলেও তাদের অনেকে এখন খোলস পাল্টিয়ে বিএনপি সেজে নতুন করে চাঁদাবাজি ও দখলবাজিতে মেতে ওঠে । এখন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নাম ভাঙিয়ে চলছে পুরো চট্টগ্রামে চাঁদাবাজির এক ধরনের মহোৎসব।
এ বিষয়ে সিএমপির এডিসি জনসংযোগ কাজী তারেক আজিজ বলেন, বৈষম্যবিরোধী পরিচয় দিয়ে কেউ অপকর্ম করলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, যদি কেউ এ বিষয় নিয়ে অভিযোগ করে তা পুলিশ খতিয়ে দেখবে। অপরাধ করে কেউ সহজে পার পাওয়ার সুযোগ নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সচেতন নাগরিক এ প্রতিবেদককে জানান, প্রশাসন এ বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা না করলে সামনে আরও বহু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে। তাই প্রশাসনকে আরও দায়িত্বশীল ও সচেতন হতে হবে। এদিকে চট্টগ্রাম নাগরিক অধিকার সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও সংগঠক স ম জিয়াউর রহমান জানান, প্রশাসন যথেষ্ট আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করছেন, তার কোন সন্দেহ নেই। এরপরও পুলিশকে আরও দায়িত্বশীল, নিরপেক্ষতা ও দক্ষতার সাথে পুলিশিং কার্যক্রমে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি আশা করেন, পুলিশ জনগণের বন্ধু এ কথাটি মাথায় নিয়ে পুলিশ কাজ করলে সাধারণ মানুষ নিশ্চিত নিরাপত্তায় থাকবে।
Leave a Reply