স ম জিয়াউর রহমান :
শেরপুর সদরের মুর্শিদপুর দোজা পীরের দরবারে তিন দিন আগে হামলা করতে গিয়ে সংঘর্ষে আহত একজন নিহতের জেরে আবার সেখানে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
গতকাল সকাল থেকে সেখানে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র্যাব সদস্য মোতায়েন থাকলেও বাধা উপেক্ষা করে জনতা তাণ্ডব চালিয়েছে বলে অভিযোগ দরবারের খাদেমদের। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত এ ঘটনা ঘটে বলে জানান শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম।
হামলাকারীরা দরবার থেকে গরু, মহিষ, ছাগল ও দুম্বাসহ বিভিন্ন মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে দরবারের খাদেমদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় এতে প্রায় এক কোটি টাকা হতে পারে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেশ কিছুদিন ধরে সদর উপজেলার লছমনপুর গ্রামের মুর্শিদপুর খাজা বদরুদ্দোজা হায়দার ওরফে দোজা পীরের দরবারের মুরিদ এবং স্থানীয় জামতলা ফারাজিয়া আল আরাবিয়া মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষক এবং তৌহিদী জনতার বিরোধ চলছিল।
এ ঘটনার জেরে গত মঙ্গলবার ভোরে মুর্শিদপুর পীরের দরবারে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে কান্দাশেরীরচর গ্রামের ইদু মিয়ার ছেলে হাফেজ উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়। বুধবার হাফেজ উদ্দিন ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় জমশেদ আলী মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজ মাঠে নিহতের নামাজে জানাজায় শেরপুরের সব মাদ্রাসা বন্ধ রেখে অংশ নিতে মাইকিং করা হয়। জানাজাকে ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভোর থেকে মুর্শিদপুর দরবার ও কুসুমহাটি বাজার এলাকায় সেনাবাহিনী, র্যাব, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা অবস্থান নেয়।
জোহরের নামাজের পর জমশেদ আলী কলেজ মাঠে হাফেজ উদ্দিনের জানাজায় বক্তারা জানান, হাসপাতালে পুলিশ পাহারায় চিকিৎসাধীনদের মুক্তি এবং ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দোজা পীরকে গ্রেপ্তার করতে হবে। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ জনতা জানাজা ছেড়ে লাঠিসোঁটা নিয়ে দরবারের দিকে অগ্রসর হয়।
এ সময় সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা বাধা দিলে, তা উপেক্ষা করে পীরের দরবারে ব্যাপক ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায় জনতা। হামলাকারীরা দরবারে থাকা গরু-মহিষ, দুম্বা, ছাগল, ভেড়াসহ গবাদিপশু ও সব ধরনের মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। প্রায় তিন ঘণ্টার তাণ্ডবে হাজার হাজার জনতার ভিড়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস।
শেরপুর ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক জাবেদ হোসেন মো. তারেক জানান, ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের গাড়ি কুসুমহাটি বাজারে পৌঁছলেও নিরাপত্তার অভাবে ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি।
পরে ইজিবাইকে করে ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগে আগুন নিভে গেছে বলে জানান তিনি।
পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে ওই এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। মানুষের উপস্থিতি বেশি থাকায় ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
তবে হাফেজ উদ্দিন নিহতের ঘটনায় এখনও কেউ অভিযোগ করেননি বলে জানান তিনি।
এদিকে দোজা পীরের ভক্ত ও সুন্নী জনতা আজ সকালে লংমার্চ করেছে দোজা পীরের দরবারে হামলার প্রতিবাদে। এ নিয়ে দোজা পীরের দরবারের আশ পাশে আতংক বিরাজ করছে। প্রশাসন থেকে নিরাপত্তার কাজে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়।
Leave a Reply