বিএম আজাহার উদ্দিন
কালকিনি(মাদারীপুর) প্রতিনিধিঃ
মাদারীপুরের ডাসার উপজেলায় একই পরিবারের তিন বোন উম্বি (৬০), আকিতন (৫০), নুরুনাহার (৪০) তিন জনই শরীরিক ও মানসিক ভাবে প্রতিবন্ধী। ঠিক মতো যেমন কথা বলতে পারেন না, তেমনি কাজও করতে পারেনা বাবা- মা হারা এই প্রতিবন্ধী তিন বোন। বাবা-মা ও ভাই ছাড়া হতদরিদ্র এই পরিবারের তাদের দেখভাল করার মত নেই কোন পুরুষ সদস্য। দারিদ্র্য পরিবারে জন্ম হওয়ায় নিতে পারেনি কোন চিকিৎসা। তাই আজ জীবনের এই সময়ও জীবন মৃত্যুর সাথে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে চায় নুরনাহার, উম্বি,আকিতনরা।
সরেজমিন চিত্রে দেখা যায়, উপজেলার ডাসার ইউনিয়ের পূর্ব দর্শনার গ্রামের ৪ নং ওয়ার্ডের মৃত সুলতান হাওলাদারের ভাঙ্গাচুরা জরাজীর্ণ ঘরে বসবাস করছে তারই তিন প্রতিবন্ধী মেয়ে মেয়ে উম্বি বেগম, আকিতন, নুরুনাহার। রোগাক্রান্ত তিন বোনকে দেখে মনে হয়, জীবনের সমস্ত রং হারিয়ে আজ তারা জীবনের শেষটা গুনছে। জীবন যেন আজ তাদের কাছে অসহনীয় বোঝা হয়ে দাঁড়িছে।
প্রতিবেশীদের কাছ থেকে যানা যায়, জন্মের পর আরদশটা সাধারণ বাচ্চার মত তারাও স্বাভাবিক ভাবে পৃথিবীতে এসেছিলো কিন্তু জন্মের কয়েক বছর পরেই আস্তে আস্তে শারীরিক ও মানসিক অবনতি হয় তাদের। এরমধ্যে মা মারা যায় তাদের, কয়েক বছর পরেই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম পিতা সুলতান হাওলাদার অসুস্থতাজনিত কারণে মারা যায়। মা-বাবাকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পরে তারা এরপর থেকেই দিনদিন তাদের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার আরো অবনতি হতে থাকে। বড় বোন উম্বি বেগম ও মেঝো বোন আকিতনের চেয়ে ছোট বোন নুরুননাহর কিছুটা সুস্থ থাকায় তিনিই মানুষের দুয়ারে দুয়ারে হাত পেতে যতটুকু সাহায্য পান তা দিয়ে কোন প্রকারে বেঁচে আছেন প্রতিবন্ধী বোনদের নিয়ে।
বড় বোন উম্বি বেগম সাংবাদিক দেখে ভেবেছিল তাদেরকেও সাহায্য করতে এসেছে তাই তিনি কাছে এসে বলেন বলেন আপনারা সাহায্য করেন, আমাগো অনেক কষ্ট হয় । মানুষ সবসময় খাবার দেয় না, যেই দিন না দেয়, হেইদিন না খাইয়া ঘুমাই। আমাগো বাঁচার জন্য একটু সাহায্য করেন।
প্রতিবেশী ইউনুস খন্দকার জানান, এই পরিবারটি অনেক অসহায় আমরা প্রতিবেশীরা যা একটু সাহায্য করি তা দিয়েই বেঁচে আছে। প্রতিবন্ধী নুরুনাহারের নামে একটি প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড থাকলেও তার বাকি বোনদের নামে কিছুই নেই। ফলে ভাতা বঞ্চিত হচ্ছেন প্রতিবন্ধী দুই বোন।
আর এক প্রতিবেশী খাদিজা বেগম বলেন, এরা তিন বোন প্রতিবন্ধী এরা কোন কাজ করতে পারেনা পৃথিবীতে তাদের আপন কেউ নেই, তারা অসুস্থ হওয়ার কারনে সাহায্যের জন্য হেঁটে দুরে যাওয়া অনেক কষ্টসাধ্যের ব্যাপার তাদের জন্য। তাই তারা সমাজের মানুষের কাছে গিয়েও সাহায্য চাইতে পারে না। সমাজের সকল বিত্তবান মানুষদের উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো।
ডাসার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম সিকদার জানান, আমার ইউনিয়নের প্রতিবন্ধী এই পরিবারটিকে আমি নিয়মিত খোজ খবর নিচ্ছি। ওএমএস এর চাউলের একটা নাম দিয়েছি। সরকারী যত সহযোগীতা দেয়ার পাশাপাশি আমি ব্যাক্তিগত ভাবে তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করবো।
এ বিষয়ে ডাসার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজা মো: গোলাম মাসুম প্রধান বলেন, আমি দেখলাম প্রতিবন্ধী পরিবারটি আসলেই অসহায়। প্রশাসন অবশ্যই তাদের পাশে দাঁড়াবে। আমি শুনেছি তাদের একজন মাত্র প্রতিবন্ধী ভাতা পায়। বাকি দুজনকে অল্প সময়ের মধ্যে প্রতিবন্ধী ভাতার আওতায় আনা হবে। সাময়িকভাবে পরিবারের জন্য যথা সম্ভব তাদের সহযোগিতা করা হবে। এছাড়াও তাদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হলে তারা যদি সেটা চালিয়ে নিতে পারে তাহলে আমরা সে ব্যবস্থাও করবো।