ভারতকে অনেক কারণেই বাংলাদেশের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখতে হবেঃ
ভারত আমাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী। সেই কারণে প্রতিবেশীকে সম্মান দিতেই ভালবাসি। তারা অসম্মান দেখালেও চুপ করে থাকতে চাই এবং কষ্ট পেলেও চুপ করে থাকি। কিন্তু আমাদের সার্বভৌমত্বের উপরে আঘাত আসলে এই জাতি দমে যাবে না, প্রয়োজনে বুক চিতিয়ে দেবে।
প্রিয় ভারত, মনে রাখবেন আমরা আপনার পেটে বসবাস করছি। আমাদের সাথে প্রতিবেশী বন্ধুসুলভ আচরণ না দেখালে আপনাদের পেটে অশান্তি সৃষ্টি হতে পারে। এমনও হতে পারে যে, আপনার পেটে ক্যান্সারের কারণে অনেক অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কেটে ফেলতে হতে পারে। ভেবে দেখবেন প্লিজ, কারও ক্ষতির চিন্তা করে নিজের কল্যাণ সাধন করা যায় কিনা?
হিন্দু ভাই-বোনদের একটা অংশকে নিয়ে খেলছেন, তারা কারা সেটা আমরা জানি। ধর্মীয় সংঘাত এই দেশে হবে না। কারণ আমরা বাংলাদেশীরা সবাই সবার ভাই ভাই। সকল ধর্মাবলম্বীরা আমরা একে অপরের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়ি। একসাথে হাঁট বাজার করি, একে অপরের অনুষ্ঠানে দল বেঁধে যাই, ধুমধামে পালন করি। অল্প কয়েকজন ফ্যাসিস্টদের জন্য আমাদের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব, ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতি বিনষ্ট করে দেবেন? এটা সম্ভব না। হিন্দু সহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বী ভাই-বোনদেরকে বুকে টেনে রাখবো তবে ফ্যাসিবাদের দোসরদেরকে অবশ্যই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে, কোন ছাড় দেয়া হবে না। জাতীয় স্বার্থে জাতি ঐক্যবদ্ধ, মনে রাখবেন প্রিয় প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত।
দেখেন, এইতো সেদিন আপনারা ডম্বুর বাঁধ খুলে দিয়ে আমাদের ফেনী, বুড়িচং, কুমিল্লা সহ কতগুলো অঞ্চল ধ্বংস করে দিলেন। আপনারা উজানের দেশ বিধায় আমাদের এতো বড় ক্ষতি করেছেন। এখানে শুধু মুসলমান নয়, হিন্দু ভাইদেরও অসংখ্য ভিটা বাড়ি শেষ হয়ে গেছে। অথচ আমরা মুসলমানরা কি তাদের বাড়ি ঘর তৈরী করতে লাখ লাখ টাকা নগদে প্রদান করি নাই? করেছি, প্রমাণ চান? প্রমাণ দিতে পারবো ইনশাআল্লাহ। আমরা সকলকে ভালবাসি। আমরা ধর্ম দিয়ে মানুষকে বিচার করিনা, বিচার করি সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসাবে। আমরা সকলকে ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে বেঁধে রাখি, রাখতে জানি।
ভারত–বাংলাদেশের সম্পর্ক বহুমুখী, আমাদের সাথে সম্পর্ক ধরে রাখার অনেক কারণ রয়েছে ভারতের। এই সম্পর্ককে পালিয়ে যাওয়া একজন স্বৈরাচারী শাসকের প্রতি ভালবাসা দিয়ে বিচার করবেন না। এটা আপনাদের মস্ত বড়ো ভুল হবে। শেখ হাসিনা একজন ফ্যাসিস্ট। সে অবলীলায় মায়ের বুক খালি করতে জানে। শিশু হত্যা করতেও তাঁর বুক কাঁপেনি। ফাঁসির আসামিকে জবাই করে হত্যা করেছে, এই দেশে অসংখ্য বোন স্বামী হারা, সন্তান হারা। অসংখ্য সন্তান পিতা হারা, মাতা হারা। ছাত্রলীগ, যুবলীগের মতো নিষ্ঠুরতা আর কোন সংগঠনে দেখা যায়নি। তারা প্রকাশ্য দিবালোকে বিশ্বজিৎ কে কুপিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে। সে যে হিন্দু সেটা প্রমাণ করার জন্য বিশ্বজিৎ কাপড় খুলে দেখাতে চেয়েছিলো। কিন্তু তারা হিন্দু জেনেও একজন যুবক বিশ্বজিৎ কে মূহুর্তের মধ্যেই মেরে ফেললো, তাদের হাত কাঁপে না, অন্তরে মমতা জাগে না। কী বর্বর! কী নিষ্ঠুর সংগঠন তাদের!আবরার ফাহাদ, নাহিদ হোসাইন, তোফাজ্জল হোসেনকে যেভাবে তারা হত্যা করেছে তাদের তো তওবা করা ছাড়া, জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া ছাড়া ঐ সকল সংগঠনের নাম মুখে নেবে কিভাবে। এই সকল ফ্যাসিস্টদেরকে ক্ষমতায় ফিরায়ে নিয়ে আসতে আপনি মোদিজীর এতো সংগ্রাম কেন? গত ১৫ বছরে ২৮ লক্ষ কোটি টাকা লুট করে নিয়ে গেছে। লুট করা এই টাকা দিয়ে উন্নয়নকে জাস্টিফাই করতে চান? আপনারাও তো দেশ চালান, এভাবেই চালান?
সন্ত্রাসীর হাতে থাকা ছোড়ার যেমন দোষ নেই, আমি মনে তেমনি আওয়ামী লীগ মানে সংগঠনেরও কোন দোষ নেই (নিজস্ব মত)। সকল দোষ ফ্যাসিস্ট চরিত্রের অধিকারী শেখ হাসিনা ও তার দোসর কুশীলব সন্তানদের। তাদের বিচার এই দেশের মাটিতে হতেই হবে। তবে কুকর্মের যে ইতিহাস আওয়ামী লীগ রচনা করেছে তার শাস্তি শতবছর দিলেও কম হবে। সুতরাং আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের এখন তওবার রাজনীতি চর্চা করতে হবে। নিঃশর্তে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে তরুণ ছাত্র সমাজের কাছে, আহত নিহতদের স্বজনের কাছে।কলঙ্ক মুক্ত না হলে এই সংগঠনের নাম মুখে নিতেও মানুষ লজ্জিত হবে। মনে রাখতে হবে আগামী বাংলাদেশের নেতৃত্বে মেধাবী তরুণেরা আছে, আমাদের নোবেল লরিয়েট ড. মুহাম্মদ ইউনুস আছে। তাঁর নেতৃত্বে সকল দল ও গোষ্ঠী আজ ঐক্যবদ্ধ।
মোদিজী, শেখ হাসিনাকে আপনার স্মৃতি থেকে মুছে ফেলুন, চমৎকার প্রতিবেশী হিসাবে সাম্য ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে বন্ধুত্বের হাত বাড়ান। আসুন সবাই শান্তিময় বিশ্ব গড়ে তুলি।
লেখক: এম এফ ইসলাম মিলন, ব্যবসায়ী ও কলামিস্ট।
Leave a Reply