সোহেল কবির, স্টাফ রিপোর্টার
ঈদের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। ঈদকে ঘিরে ঐতিহ্যবাহী নকশী (ফুল) পিঠা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন রূপগঞ্জ হাটাবো গ্রামাঞ্চলের নারীরা।মুসলমানদের ধর্মীয় বড় উৎসবে পরিবারের সকলের মধ্যে ঈদ-আনন্দ ভাগাভাগি করার মানসেই তৈরি করা হয়ে থাকে এসব নকশী পিঠা। ধনী কিংবা দরিদ্র প্রায় সকল পরিবারেই কম-বেশি থাকে নানা ধরনের নকশী পিঠা তৈরির আয়োজন।
হাটাব প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের প্রতিটি ঘরে সাংসারিক নিয়মিত কাজ-কর্ম বাদে এখন হাতে নেই তেমন বাড়তি কাজ। তাই গ্রামীণ গৃহবধু, কন্যা, শাশুড়ী, দাদী, চাচী, পুত্রবধূরা ঈদের আগে থেকেই গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য ঈদের নকশী পিঠাসহ অন্যান্য রকমারি পিঠা তৈরীর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। চাঁদ দেখার আগেই গ্রামের অধিকাংশ ঘরে ঈদের প্রয়োজনীয় বাহারী নকশী পিঠা তৈরীর কাজ সম্পন্ন করে ফেলেছেন।গ্রামীণ নারীদের তৈরী এসব পিঠার মধ্যে রয়েছে নকশী পিঠা, পাতা পিঠা, শামুক পিঠা, ঝিনুক পিঠা, গোলাপ ফুল পিঠা, ঝিকিমিকি পিঠা, টিপটপ পিঠা, ঝুড়ি পিঠা ইত্যাদি।
গৃহিনী সনিয়া বেগম জানান, এসব পিঠা তৈরী করতে বেলুন, পিড়ি, জলচৌকি, কাটার, খেঁজুর কাঁটা অথবা সূঁই, তেল, কলা পাতা, চালুন, কুলা, থালা-বাসন প্রভৃতি সরঞ্জামের প্রয়োজন হয়। নকশী (ফুল) পিঠা তৈরি করতে আতপ চাল কুটে গুড়ো করে প্রথমে গুড়োগুলোকে গরম পানিতে সেদ্ধ করে কাঁই তৈরী করা হয়। পরে কাঁই কেটে লুট বানানো হয়। অত:পর লুটগুলোকে থালা ও কলা পাতার উপর রেখে তৈল মৈথুন করে তার উপরে মনের মাধূরী মিশিয়ে খেঁজুর কাঁটা অথবা সূঁই দিয়ে বিভিন্ন ধরণের নকশা আঁকা হয়। অঙ্কিত নকশার ফাঁকে ফাঁকে কাটার বা সূঁই দিয়ে খাঁজ কেটে কেটে অপ্রয়োজনীয় কাঁইগুলো তুলে ফেললেই ফুলপিঠা বা নকসী পিঠা তৈরী হয়ে যায়।
পরবর্তীতে সংরণের জন্য কিছু কাঁচা পিঠা কেউ কেউ রৌদ্রে শুকিয়ে রাখেন। আবার কেউ তেলে ভেঁজে সংরক্ষণ করে থাকেন। গৃহিনীরা এগুলোকে ঈদের আগের দিন রাতে অথবা ঈদের দিন সকালে পূণরায় তেলে ভেঁজে চিনি অথবা গুড়ের গরম শিরার মধ্যে ডুবিয়ে খাবারের উপযোগী করে পরিবেশন করেন। ঈদের দিন পরিবারের সকলে পরম আনন্দে চমকপ্রদ ও মুখরোচক এ পিঠাগুলো ভোজন করে ঈদ-আনন্দ উদ্যাপন করে থাকেন। অতিথি আপ্যায়নে হাটাব এলাকার মানুষের জুড়ি নেই। কিছু পিঠা রেখে দেওয়া হয় পরবর্তীতে বেয়াই-বেয়াইন, কন্যা-জামাতা তথা অতিথি আপ্যায়নের জন্য।
Leave a Reply