দেওয়ান মাসুকুর রহমান, নিজস্ব প্রতিবেদক
মৌলভীবাজার, ০২ জুন ২০২৫ : মৌলভীবাজারে কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে মনু নদীর পানি উপচে বাঁধের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে করে প্রায় ৮ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়া জেলার বাকি সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অব্যাহত বৃষ্টিপাতের কারণে মনু নদীর পানি বিপৎসীমার ৭৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রাজনগর ও সদর উপজেলা অংশে বাঁধের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় নতুন করে বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। মৌলভীবাজার-শমশেরনগর সড়কের শিমুলতলা অংশ পানির নিচে চলে গেছে।
এদিকে বাঁধের রাজনগর উপজেলা অংশের আদিনাবাদ, একামধু ও কান্দিরকুল স্থান তিনটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যেকোনো সময় বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানয়ীরা। পাড়ের মানুষ রাত জেগে বাঁধ পাহারা দিচ্ছেন।
এ ছাড়া ধলাই ও কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। জুড়ী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ভারী বর্ষণে কুলাউড়ার মনু ও গোগালীছড়ায় দু’টি বাঁধ ভেঙে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ ঘটনায় পৌর এলাকার জয়পাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
কুলাউড়া-বড়লেখা সড়কের লোয়াইউনি এলাকায় পাহাড় ধসে রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে।
কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা কমরেড আব্দুল লতিফ জানান, ‘পৃথিমপাশা ইউনিয়নের শালিকা এলাকায় একটি কালভার্টের জন্য সড়ক বিভাগ রাস্তা কেটেছিল। এখন মনু নদীর পানি বেড়ে তা ভেঙে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে।’
কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: মহি উদ্দিন জানান, ‘কুলাউড়া পৌরসভার পূর্বদিকে গোগালীর বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে জয়পাশা দানাপুর ও জয়পাশা এলাকার তিন শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।’
মৌলভীবাজার মাতারকাপন এলাকায় সুইপার কলোনির প্রায় শতাধিক পানিবন্দি মানুষ পৌর কর্তৃপক্ষের সহায়তায় আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছে বলে জানা গেছে।
পানিবন্দি বন্যার্ত মানুষের পাশে দরদ ও সহমর্মিতা নিয়ে সকলকে এগিয়ে আসার জন্য আহবান জানিয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য, আরপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট কমরেড সৈয়দ আমিরুজ্জামান।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজারে ৮ হাজার ৪৭৩ জন পানিবন্দী রয়েছেন। সাত উপজেলায় ১২৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে শতাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। প্রতিটি উপজেলায় ৩ লাখ টাকা ও ১৩০ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া এবং বিশেষ নিয়ন্ত্রণকক্ষ চালু করা হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার জন্য ৩৭ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে ৫০ লাখ টাকার অনুদান চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন বলেন, ‘আমরা বন্যার্তদের জন্য প্রতিটি উপজেলায় ৩ লাখ টাকা ও ১৩০ টন চাল দিয়েছি। এ ছাড়া সেনাবাহিনী, বিজিবি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ ৩৭ সদস্যের বন্যা মনিটরিং কমিটি গঠন করেছি। জেলার সব উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে।’
Leave a Reply