শওকত আলম, (কক্সবাজার):
৭৬ বছর বয়সী হারুন তাহের গত ১৯ জানুয়ারি দুপুরে মসজিদ থেকে নামাজ শেষ করে বেরিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। দৌড়াতে দৌড়াতে এক যুবক সামনে। এসে জানালেন- আপনার বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। শুনে আকাশ ভেঙে পড়ার মতো হলেও নিয়তি হিসেবে মেনে নিলেন নীরবে। তিনি জানালেন-বয়সে লবন মাঠ দখল করার মতো জঘন্য কাজ করবো কী করে?
তাছাড়া যে ঘটনার মামলায় আমাকে আসামি করা হয়েছে সে ঘটনার সময় আমি ঘটনাস্থল থেকে আনুমানিক ১২ কিলোমিটার দূরে কালারমারছড়ার মাইজ পাড়া জামে মসজিদের আঙিনায় অবস্থান করছিলাম, যা আমার কল লিস্ট লোকেশন পর্যালোচনা করলে সত্যতা পাওয়া যাবে।
গত ১৮ নভেম্বর একই ঘটনায় কক্সবাজারের পেকুয়া মৌজার লম্বা ঘোনা উজান-টিয়া করিদিয়ায় লবণমাঠে সংগঠিত একই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুটি মামলায় আসামি করা হয় মহেশখালী কালারমার ছড়া ইউনিয়নের ইউনুছখালীর একই পরিবারের দুইজন ব্যবসায়ীককে। একজন ৭৬ বছর বয়সী অসুস্থ বৃদ্ধ ও অন্যজন তার পুত্র ব্যবসায়িক মোস্তাফা কামাল। গত ১৯ জানুয়ারি কক্সবাজারের শেকুয়া খানায় রুজু হওয়া ওয়াজ উদ্দীন মাহমুদ নামে এক বাদীর একটি মামলায় ভাদের আসামি করা হয়। যার মামলা নম্বর-১০।
হারুন তাহেরের বড় ছেলে এবং উপজেলা শ্রমিকদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলে নানারকম মামলা হামল্য ও নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন ব্যবসায়ী মোস্তাফা কামাল। তার ব্যক্তিগত ব্যবহারের মুঠোফোনের কল লিস্ট ও লোকেশন পর্যালোচনা করে দেখা যায় ঘটনার সময় তাঁরও অবস্থান ছিল কালারমার ছড়ার ইউনুছখালী বাজারস্থ মোস্তফা কামালের ব্যবসায়ীক কার্যালয়ে।
একই ঘটনায় পরদিন ২০ জানুয়ারি আরও একটি মামলা দায়ের করেন জসীম উদ্দীন সরকার নামে আরেক ব্যক্তি। যার মামলা নম্বর-১১। ওই মামলায়ও তাদের আসামি করা হয়। ভিন্ন তারিখে দুইটি মামলা হলেও ঘটনার সময় দেড় ঘন্টার ব্যবধান যেটি একই এলাকা বলে উল্লেখ করা হয়। প্রথম মামলায় ঘটনার সময় হিসেবে উল্লেখ করা ৮ জানুয়ারি দুপুর ২ টা আর ২য় মামলা ১৮ জানুয়ারি দুপুর সাড়ে ৩টা। মামলায় পিতা ও পুত্রকে আসামি করার বিষয়টি পূর্ব শত্রুতা ও পরিকল্পিত ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক হয়রানি বলে মনে করছেন। পরিবার। ইতোমধ্যে এর সুষ্ঠু তদন্ত চেয়ে ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে জেলা পুলিশ সুপার, জেলা প্রশাসক, ডিআইজি ও আইজিপি বরাবর লিখিত আবেদন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
মিথ্যা ভাবে মামলার আসামি নির্যাতিত বিএনপি নেতা মোস্তাফা কামাল জানান-মহেশখালীর আবুল হোসেন নামে এক ব্যক্তি হতে আমি ব্যবসা সূত্রে ২ লাখ টাকা পাওনা আছি, আমাকে একটি ব্যাংক চেকও দেন তিনি। কিন্তু ব্যাংকের একাউন্টে কোনো টাকা ছিলো না এবং সরাসরিও আমার পাওনা টাকা পরিশোধ করেননি, এ নিয়ে আমি আবুল হোসেনের কাছে উকিল নোটিশ পাঠাই এরপর থেকে তিনি আমি ও আমার পরিবারের উপর ক্ষেপে আছেন। পাওনা টাকা। চাইলে তিনি আমাকে বিভিন্ন হামলা ও মামলার হুমকি দিয়ে আসছিলেন। আর পেকুয়া থানায় দায়ের হওয়া মামলার বাদীদের সাথে মহেশখালীর এই আবুল হোসেনের আত্মীয়তা রয়েছে, ফলে প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে আবুল হোসেন জসীম উদ্দীন ও ওয়াজ উদ্দীনকে দিয়ে তিনি ও তার পিতাকে মিথ্যে মামলায় জড়িয়ে দিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ-পুলিশ রাজনৈতিক প্রভাবের কাছে নতিস্বীকার করে বা কোন ইন্ধন বা চাপের কারণে এ ধরনের মামলায় নিরীহ ব্যক্তিদের আসামি করা খুবই দুঃখজনক। এই ঘটনা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে মামলায় আসামি হওয়া নিরীহ ব্যক্তিদের অব্যহতি দেওয়ার দাবি জানান তারা। মামলার বিষয়ে বাদি ওয়াজেদ উদ্দিন জানান, আমি জমির মালিক, আমরা আমাদের প্রজেক্ট চাষ করতে চাইলে আমাদের উপর হামলা করা হয়েছে। হামলার ঘটনায় আমর মামলা করেছি। তবে তিনি হারুন তাহের ও মোস্তাফা কামাল নামে এই দুই ব্যক্তিকে চিনে না বলেও জানান। কিভাবে তাদের নাম মামলায় আসলো সে বিষয়ে মামলার এই বাদি কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। তবে আরেকটি মামলার বাদী জসিম উদ্দিন সরকারকে ফোন দিলে সাংবাদিকের পরিচয় জেনে কল কেটে দেন। এ বিষয়ে পেকুয়া থানার ওসি সিরাজুল মোস্তাফা জানান, আসলে মামলার এজাহার আসার পর কে অপরাধী বা কে নিরপরাধ তা দেখার সময় থাকে না, দ্রুত মামলা না নিলেও আমরা বিতর্কিত হয়ে পড়ি। যদি নিরাপরাধ ব্যক্তির ভুল নাম চলে আসে তা তদন্ত সাপেক্ষে
বাদ দেওয়া হবে। মামলার চূড়ান্ত তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কাওকে হয়রানী বা গ্রেফতার করা হবে না বলেও জানান তিনি। বাংলাদেশ মানবাধিকার ফোরামের কক্সবাজার জেলা সভাপতি ও সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী সেজান এহেসান জানান, এভাবে নির্দোষ ব্যক্তিদের মামলায় আনা মানে সেই মামলাটি হাল্কা হয়ে যাওয়া। পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তা সে বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করে নিরপরাধ ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে দ্রুত আদালতে চার্জশিট প্ররণ করা উচিত।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার রহমত উল্লাহ জানান, জেলায় দায়িত্বে যতদিন আছি আমার শতভাগ প্রচেষ্টা থাকবে কোন মামলায় নিরপরাধ কাওকে অযথা হয়রানি করা হবে না। তিনি ইতোমধ্যে বিষয়টি জানার পরে সংশ্লিষ্ট থানায় এ নিয়ে গুরুত্বের সাথে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে বলে জানান।
Leave a Reply