মোঃ মেহেদী হাসান ফুয়াদ
আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় থাকা দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত হলো ঠাকুরগাও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার অরেঞ্জ ভ্যালি । খুলে দেয়ার প্রথম দিনেই সারা মিলেছে ব্যাপক। ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার মালঞ্চা গ্রামের অরেঞ্জ ভ্যালিতে দার্জিলিং জাতের কমলাগাছের ডালে ডালে এবারও থোকায় থোকায় ঝুলছে ছোট-বড় সবুজ কমলা।
কমলার ভারে হেলে পড়েছে গাছের ডালপালা। কমলার পাশাপাশি এবার সেখানে চাষ করা হয়েছে মাল্টাও।এ মাল্টা আবার সবুজ নয়,কমলার মত হলুদ রঙের। সবুজ জাতের মাল্টা গুলো কিছুটা টক হলেও হলুত জাতের এই মাল্টা গুলো দারুণ মিষ্টি। নয়নাভিরাম এ কমলা বাগান দেখতে প্রথম দিনেই দেখা মিলে দূর-দূরান্ত থেকে হাজারো দর্শনার্থীর। তাদের আগ্রহ দেখে মনে হয়েছে যেন তারা আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা ছিল কবে এই অরেঞ্জ ভ্যালি খুলে দেয়া হবে। দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থী আসতে শুরু করেছে বাগানে। মিষ্টি এবং রসালো এ কমলা ও মাল্টা বাগানেই বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা কেজি দরে। বাগান থেকে এবার প্রায় ৮হাজার থেকে ১০হাজার কেজি কমলা বিক্রি হবে প্রায়৩০ লাখ টাকার।সঙ্গে রয়েছে হলুদ মাল্টা। বাগান মালিক আশা করছে ফলন কম হলেও দামে এবার তা পুষিয়ে যাবে।
পীরগঞ্জ উপজেলার ২নং –কোষারানীগঞ্জ ইউনিয়নের মালঞ্চা গ্রামের আড়াই বিঘা জমির ওপর ভারতীয় দার্জিলিং জাতের কমলার বাগান করেছেন পীরগঞ্জ উপজেলার বীরহলি গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা আবু জাহিদ ইবনুল ইকরাম জুয়েল। বাগানটিতে আড়াইশোর মতো কমলাগাছ রয়েছে। নবমবারের মতো তাঁর এ বাগানের গাছে এবার কিছুটা কম কমলা ধরেছে। তবে কমলার আকার অন্যান্য বারের চেয়ে ভাল। ১১ বছর আগে ঠাকুরগাঁও জেলা হর্টিকালচার থেকে প্রতি চারা ৫ টাকা করে ক্রয় করে রোপণ করেন জুয়েল। যদিও তার এ বাগান করার ইচ্ছা ছিল না। শুধু হর্টিকালচার সেন্টারের কর্মকর্তাদের অনুরোধে তিনি কমলার চারাগুলো কিনেছিলেন। এখন সেই আড়াইশো গাছ থেকে বার্ষিক প্রায় ৩০ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করছেন কৃষি উদ্যোক্তা জুয়েল। এবার কমলার সঙ্গে বিক্রি করছেন হলুদ মাল্টা। দিন যত যাবে দর্শনার্থীদের ভিড় ততই বাড়বে। আর এই চাপ সামলাতে এবার আগের ভাগেই বাড়তি ব্যবস্থা নিয়েছেন মালিক। কড়া নিরাপত্তা সহ বাগানে প্রবেশের জন্য ৪০ টাকা মূল্যের টিকিটের ব্যবস্থা করেছেন। কমলা বাগান দেখতে এসে বাগানের সৌন্দর্য অবলোকন করার পাশাপাশি দর্শনার্থীরা যাতে ক্লান্তি দুর করতে পারেন সে জন্য এবার বাগানে ক্যাফে যুক্ত করা হয়েছে পারবেন।শিশুদের বিনোদনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে প্লেজোন।রয়েছে গাছ দিয়ে সাজানো অসংখ্য সেলফি বুথ। উদ্যোক্তা জুয়েল জানান, তাঁর বাগানে দার্জিলিং জাতের কমলা বারী-৪ জাতের হলুদ রং এর মাল্টা চাষ হয়। এ বাগানের কমলা মাল্টা স্বাদে দার্জিলিংয়ের কমলা ও মাল্টার মতো। অর্গানিক পদ্ধতিতে তিনি এ বাগান করেছেন। কোনো কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। বাগানের কমলা ৪০০ ও মাল্টা ৩০০ গাছ রয়েছে। এবার ১০ হাজার কেজি কমলা ও ৭হাজার মাল্টা উৎপাদন হবে বলে বাগানের মালিক জুয়েল জানিয়েছেন।ভারতীয় দার্জিলিং জাতের কমলাগাছ ৫০ বছর পর্যন্ত ফল দেয়। এটি একটি অর্থকরী ফসল, যা খুব সহজে ও স্বল্প খরচে উৎপাদন করা যায় বলে জানান তিনি। কেউ যদি এমন বাগান করতে চায়, তাহলে তার পক্ষ থেকে কমলা চাষ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করবেন বলেও জানান সফল এ উদ্যোক্তা। যাবেন কি ভাবেঃ দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে ট্রেন ও বাস উভয় বাহনে যাওয়া যাবে। পীরগঞ্জ ষ্টেশনে নেমে ৪ থেকে সাড়ে ৪ কিলোমিটার ও বাসযোগে চৌরাস্তা মোড়ে নেমে ৪ কিলোমিটার রিস্কা, ভ্যান, ইজবাইক যোগে যাওয়া যাবে। যারা বিমানে যেতে যেতে চান তাদেরকে সৈয়দপুর বিমান বন্দরে নেমে সেখান থেকে কার, মাইক্রো অথবা বাসে করে যাওয়া যাবে। থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থাঃ খেতে গেলে যেতে হবে চৌরাস্তার মোড়ে। ফাস্টফুট পাওয়া যাবে বাগানের ভিতরে ক্যাফেতে। থাকতে হলে পীরগঞ্জ উপজেলা শহরে অথবা ঠাকুরগাঁও জেলা শহরে যেতে হবে।
Leave a Reply