মো. রাসেল শেখ, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি:
নড়াইল সদর উপজেলার সরকারি গাছ কাটার মহোৎসব শুরু হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, কোন অনুমতি বা ছাড়পত্র কিংবা নিয়মনীতি ছাড়াই স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এসব গাছ কেটে নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে প্রকাশ্যে সরকারি গাছ কেটে দুই লাখ টাকা লোপাট করার অভিযোগে স্থানীয় দুই ব্যক্তির নামে মামলা করেছেন সদর উপজেলার ভদ্রবিলা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা বেবি রানী রায়। এরপরও অবৈধভাবে সরকারি গাছ কাটা ও পাচার থেমে নেই। ইতিমধ্যে কমপক্ষে অর্ধশতাধিক গাছ কেটে নিয়েছেন দুর্বৃত্তরা। জানা গেছে, নড়াইল সদর উপজেলার গোপালপুর গ্রামে ৪টি সরকারি গাছ প্রকাশ্যে কেটে ২ লাখ টাকা বিক্রির অভিযোগে গত ২৯ ডিসেম্বর দুই জনকে অভিযুক্ত করে নড়াইল সদর থানায় মামলা দায়ের করেছেন ভদ্রবিলা ইউনিয়ন ভ‚মি সহকারী কর্মকর্তা বেবি রানী রায়। মামলায় অভিযুক্তরা হলেন নড়াইল সদর উপজেলার দিঘলিয়া গ্রামের মৃত শফিউদ্দিন মোল্যার ছেলে গোলাম রব মোল্যা ও ভদ্রবিলা গ্রামের মোহর শেখের ছেলের লিটন শেখ। মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, সদর উপজেলার ভদ্রবিলা ইউনিয়নের গোপালপুর বাজারের পাশে সরকেলডাঙ্গা মৌজার খাস খতিয়ানের ১০৬৮ও ১০৭১ নং দাগের জায়গার উপর ৩টি বড় মেহগনি ও একটি বড় দেবদারু গাছ ছিল। দিঘলিয়া গ্রামের জৈনক গোলাম রব মোল্যা গত ২৯ ডিসেম্বর গাছকে নিজের মালিকানা দাবী করে গাছগুলো কাটতে থাকেন। এসময় ভদ্রবিলা ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ড সদস্য মাসুম বিল্লাহ সরকারী গাছ কাটতে নিষেধ করেন। নিষেধ উপেক্ষা করে তিনি গাছগুলো কেটে ২ লাখ টাকায় বিক্রি করেন। ভদ্রবিলা ইউনিয়ন ভ‚মি সহকারী কর্মকর্তা বেবি রানী রায় বলেন, গাছগুলো সরকারি জমিতে ছিলো। গোলাম রব ও লিটন শেখ যোগসাজোশে গাছগুলো চুরি করে কেটে বিক্রি করেছেন। আর এ অভিযোগে ওই দুই ব্যক্তির নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত গোলাম রব মোল্যা জানান,গাছগুলো তার নিজের জায়গায় উপর। তিনি গাছগুলি ভদ্রবিলার লিটন শেখের কাছে বিক্রি করেছেন। তবে আরেক অভিযুক্ত লিটন শেখ গাছ কাটা ও ক্রয়ের কথা অস্বীকার করে বলেন,তাকে অহেতুক ফাঁসানো হয়েছে। এদিকে,সদর উপজেলার সিঙ্গাশোলপুর ইউনিয়নের সিঙ্গাশোলপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন পাকা রাস্তার পাশ থেকে ৬ টি মেহগনি গাছ কেটে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে বিল্লাল শেখের ওরফে মেজর বিল্লালের বিরুদ্ধে। একইভাবে শেখহাটি ইউনিয়নের আফরা গ্রাম থেকে মালিয়াট অভিমুখে পাকা পাকা রাস্তার পাশ থেকে সাতটি মেহগনি গাছ কেটে বিক্রি করেছেন স্থানীয় একটি চক্র। পরবর্তীতে পুলিশের সহযোগিতায় চারটি গাছ উদ্ধার হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এছাড়া বিছালী ইউনিয়নের চাকই মোল্লার হাটে ১২ টি সরকারি গাছ কেটে বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে জনৈক হিমু শেখের বিরুদ্ধে। গাছগুলো ১ লাখ ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন তিনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে হিমু শেখ বলেন, গাছ বিক্রির টাকা স্থানীয় মসজিদে দেওয়া হয়েছে। একই ইউনিয়নের চাকই পূর্ব পাড়া আয়ুব খানের বিরুদ্ধে রয়েছে সরকারি ৪ টি গাছ বিক্রি করার অভিযোগ। তবে সরকারি গাছ বিক্রির দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা অভিযোগ অস্বীকার করেন। প্রকাশ্যে এসব সরকারি গাছ কেটে নেওয়ার বিরুদ্ধে কঠোর কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জানতে চাইলে,সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি (এসিল্যান্ড) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, ইতিমধ্যে একটি ঘটনায় সরকারী গাছ লুট করার অপরাধে অভিযুক্তদের বিরূদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে তদন্ত মোতাবেক অন্যান্যদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে জানান তিনি।
Leave a Reply